Rajbari Protidin

২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , শনিবার
ব্রেকিং নিউজ

গোয়ালন্দে ৩য় লিঙ্গের সদস্যদের স্বপ্নের নীড়ে সুখের ঝিলিক

আজু শিকদার : প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে কাঙ্খিত ঠিকানা পেয়েছেন তৃতীয় লিঙ্গের ৭ সদস্য। তাদের কাছে এটা শুধু ঠিকানা নয়, জমিসহ পাকা ঘর পেয়ে তারা যেন স্বপ্নকে হাতের মুঠোয় পেয়েছেন।
গোয়ালন্দ উপজেলার পদ্মা পাড়ের দৌলতদিয়া ইউনিয়নের গফুর মন্ডলের পাড়ায় ২২ শতাংশ জমির উপর ৭টি পাকা ঘর নির্মাণ করে গড়ে তোলা হয়েছে ৩য় লিঙ্গের সদস্যদের আশ্রয়ণ প্রকল্প। ৭ জনকে জমিসহ ঘর প্রদান করা হলেও এখানে আরো বেশ কয়েকজন তৃতীয় লিঙ্গের সদস্য অতিথি হিসেবে বসবাস করেন। আশ্রয়ণ প্রকল্পে ওঠার পর প্রতিনিয়ত গান, হাসি-আনন্দে সময় পার করছেন তারা। গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি ও কবুতর পালন করছেন, আবার কেউ শাক-সবজি চাষ করছেন। এ সবের মধ্যদিয়ে তারা নতুন করে মাথা উঁচু করে বাঁচার স্বপ্নে বিভোর। প্রথম দিকে স্থানীয়দের আপত্তি থাকলেও কয়েক দিনের মধ্যে স্থানীয়রাও তাদের আপন করে নিয়েছেন।

সরজমিনে দেখা যায়, জমিসহ সেমিপাকা স্বপ্নের নীড়ে তারা কর্মব্যাস্ত ও হাসি আনন্দে জীবন যাপন করছেন। এসময় তৃতীয় লিঙ্গের নিলীমা জানান, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে সবাই ভালো আছি। স্থায়ী ঠিকানা দিয়ে নতুন জীবন দিয়েছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী। এখন জীবন সাজানোর স্বপ্ন দেখছি। নতুন জীবন পেতে সহায়তা করায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। পুনর্বাসিত চায়না ও অনু বলেন, ‘বাবা-মা ও পরিবারের লোক যা করেনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের জন্য তাই করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দীর্ঘজীবী হোন।’ অপর্ণা ও সুরভী বলেন, ‘আশ্রয়ণের ঘরে আসার পরও আশপাশের মানুষ প্রথমদিকে একটু বাঁকা নজরে দেখত। তবে এখন বেশ ভালোভাবে কথা বলেন, আমাদের এখানে আসে, আমরা তাদের সাথে মিলে মিশে আছি, আগামীতেও থাকব।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ধারণা ছিল তৃতীয় লিঙ্গের ওরা হয়তো এখানকার সামাজিক পরিবেশ নষ্ট করবে। সে ধারণা ভুল ছিল। তারা গ্রামের স্বাভাবিক মানুষের মতো জীবন যাপন করছে। গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি পালন ও শাক-সবজি চাষও করে। এরা স্থানীয় কাউকে বিরক্ত করে না। আশ্রয়ণ প্রকল্পে ওঠার পর প্রতিনিয়ত গান, হাসি-আনন্দে সময় পার করছেন তারা।
উপজেলা তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যদের দলনেত্রী মাহিয়া মাহি বলেন, বিষয়টি আমার কাছে এখনো স্বপ্নের মত লাগে। কখনো ভাবি নি আমরা জমির মালিকানাসহ নতুন পাকা ঘর পাবো। বাবা মা থেকে বিচ্ছিন্ন আমরা ভাসমান হয়ে গিয়েছিলাম। আমারা কোথাও বাসা ভাড়া নিতে গেলেও অনেক লাঞ্চনার শিকার হয়েছি, অনেকের কটুকথাও শুনেছি, বাসা ভাড়া পর্যন্ত দেয়নি। আজকে আমরা ২ শতাংশ জমিসহ পাকা ঘর পেয়েছি, সুন্দর মতো জীবন যাপন করছি এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি আমাদেরকে বেঁচে থাকার মতো সম্মান দিয়েছেন। নাম ঠিকানাহীন আমাদেরকে নাম ও ঠিকানা দিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, স্থায়ী ঠিকানা ও ঘর পেলেও আমাদের একটি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিলে আমাদের মানুষের দ্বারে দ্বারে আর হাত পাততে হবেনা। আমাদের মধ্যে অনেকেরই অনেক বিশেষ যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতা রয়েছে।
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জাকির হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, মজিববর্ষ উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যে অগ্রাধিকার আশ্রয়ন প্রকল্পের আওতায় তৃতীয় লিঙ্গের এই গোয়ালন্দ উপজেলার যারা আছেন তাদের মধ্যে যাচাই বাচাই করে যারা গোয়ালন্দের স্থায়ী বাসিন্দা তাদের জন্য সেমিপাকা ঘর নির্মাণ করে দেই। এই ৭টি ঘর নির্মাণ করার আগে এখানে তৃতীয় লিঙ্গের যারা থাকতেন তারা মানবেতর জীবনযাপন করতেন। তাদের সাথে একদিন পরিচয়ের পর তাদের কাছে আমরা জানতে চাই আশ্রয়ন প্রকল্পে থাকবে কিনা? তারপর তারা হাসিমুখে থাকতে ইচ্ছাপোষণ করে। তারপর আমরা তাদের ২২ শতাংশ জায়গার উপর ৭টি ঘর নির্মাণ করে তাদের কাছে হস্তান্তর করি। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ওরা আবাসন প্রকল্পের আঙ্গিনায় বিভিন্ন রকম শাকসবজি, হাঁস, মুরগী, কবুতর লালন পালন করছেন। তারা গবাদিপশু পালনে আগ্রহী। এ ব্যাপারে তাদের সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।

সোশাল মিডিয়া

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d bloggers like this: