স্টাফ রিপোর্টার : রাজবাড়ীতে বর্ষা মৌসুমে সাপের উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে। কয়েকদিনে সাপের কামড়ে ৪জনের মৃত্যু হয়েছে। রাজবাড়ী পুলিশ সুপার জি.এম, আবুল কালাম আজাদ ও সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিম টিটন সকলকে সতর্ক থাকা সহ সাপে কামড় দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ প্রদান করেছেন।
জানাগেছে, গত ২২ আগস্ট দিবাগত রাত দেড় টায় পাংশা উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের জয়কৃঞ্চপুর গ্রামের শাহজাহান আলীর মেয়ে শহীদ খবিরুজ্জামান উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সাফাকে বিরল প্রজাতির বিষাক্ত কালাচ সাপে দংশন করে। তার পরিবারের সদস্যরা পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। পরে সাফাকে কুষ্টিয়া মেডিকেল হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
গত ৫ সেপ্টেম্বর রাতে মুরগির ফার্মের পাশে একটি ঘরে শুয়ে ছিলেন হামিদুর রহমান (৩০)। রাত দেড়টার দিকে পায়ে কিছু একটা কামড় দেয়। তাৎক্ষণিক লাইট জ্বালিয়ে দেখেন একটি সাপ চলে যাচ্ছে। তখন মুরগির ফার্মের মালিকে ফোন দেন। ফোন পেয়ে ফার্মের মালিক দ্রুত উদ্ধার করে পাংশা হাসপাতালে নিয়ে আসেন। হামিদুর নওগাঁর মান্দা উপজেলার কবুলপুর গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে। তিনি পাংশা উপজেলার মৌরাট ইউনিয়নের তালতলা গ্রামে একে আজাদের মুরগির ফার্মে কাজ করতেন। মুরগির ফার্মের মালিক একে আজাদ রাত চারটার দিকে হামিদুরকে নিয়ে পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান। সেখান থেকে তাকে কুষ্টিয়া মেডিকেল হাসপাতালে নেয়া হয় এবং কুষ্টিয়া থেকে তাকে রাজশাহী মেডিকেলে পাঠালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখানে মারা যান।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর গোয়ালন্দ উপজেলার ছোট ভাকলা ইউনিয়নের চর বালিয়াকান্দি গ্রামে সাপের কামড়ে স্কুল ছাত্রী আঁখি খাতুন (১৪) মারা যান। আঁখি খাতুন বরাট ভাকলা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী। গত ২২ সেপ্টেম্বর রাত ১০ টার সময় ঘুমন্ত অবস্থায় বিষধর সাপ আঁখির হাতে কামড় দেয়। এরপর রাত সাড়ে ১০ টার দিকে আঁখিকে গোয়ালন্দ উপজেলা হাসপাতালে নেয়া হয়। পওে তাকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় মারা যায়।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৭টার দিকে রাজবাড়ী সদর উপজেলার ভবানীরপুর গ্রামের নয়ন শেখের স্ত্রী নার্গিস আক্তার (৩৫) কে সাপে কামড় দেয়। তাকে দ্রুত রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালে পৌছানোর পর দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
রাজবাড়ী পুলিশ সুপার জি.এম. আবুল কালাম আজাদ বলেন, পরপর ৪টি সাপের কামড়ে মৃত্যুর ঘটনা অত্যন্ত দু:খজনক। রাজবাড়ী জেলা পুলিশ সকল সদস্য গভীর শোক প্রকাশ করছে। তবে সাপে কামড় দেয়া রোগীর চিকিৎসা অত্যন্ত জটিল। তাই সতর্কতা ও সচেতনতাই পারে সাপে কামড় হতে মুক্ত থাকতে। সাপে কামড় দিলে প্রয়োজনে পুলিশকে অবহিত করবেন, আপনাদের সহযোগিতায় ও সেবায় পুলিশ সর্বদা প্রস্তুত।
রাজবাড়ী সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিম টিটন বলেন, জেলার প্রতিটি হাসপাতালেই সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা ও পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন রয়েছে। সাপে কামড়ের হাত থেকে বাঁচতে সবাইকে বাড়ির আঙ্গিনা সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ঘরের মধ্যে কোন আবর্জনা জমিয়ে রাখা যাবেনা। ঘরের মেঝে বা দেয়াল মাটির হলে কোন গর্ত রয়েছে কিনা খেয়াল রাখা লাগবে। বাড়ির আশপাশে চুনের সঙ্গে ব্লিচিং পাউডার মিশিয়ে ছড়িয়ে দিতে পারেন। এর ঝাঁঝালো গন্ধে সাপ আসেনা। রাতে অবশ্যই বিছানা ঝেড়ে মশারী টানিয়ে শোবেন। দরজা-জানালার নিচে ফাঁকা জায়গা কাপড় গুঁজে ভরাট করে রাখুন।