Rajbari Protidin

২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , শনিবার
ব্রেকিং নিউজ

রাজবাড়ী-২ আসন : এবার মনোনয়ন চাইবেন পরীক্ষিত আ.লীগ নেতা এ্যাড. ফরহাদ আহমেদ

স্টাফ রিপোর্টার : বাঙ্গালী জাতির ইতিহাসে চির অম্লান ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান এবং ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী, সাবেক ডেপুটি এটর্নি জেনারেল ও আওয়ামী লীগ নেতা এ্যাড. ফরহাদ আহমেদ আবারও রাজবাড়ী জেলার পাংশা,কালুখালী ও বালিয়াকান্দি উপজেলা নিয়ে গঠিত রাজবাড়ী-২ আসনে মনোনয়ন চাইবেন।
দৈনিক রাজবাড়ী কন্ঠের সাথে একান্ত সাক্ষাতকারে বলেন, রাজবাড়ী-২ আসনে দলীয় নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই পরিবর্তনের দাবী রয়েছে। এরই অংশ হিসেবে আমি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চাইব।
রাজবাড়ী-২ নির্বাচনী এলাকায় চলমান উন্নয়ন কার্যক্রমকে শেখ হাসিনার সরকারের সুষম উন্নয়নের ধারা উল্লেখ করে বলেন, এর জন্য ব্যক্তি বিশেষের কোন অবদান নেই। উপরন্ত এ অঞ্চলে সরকারী অর্থ ব্যয় করে নির্মিত বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবনের নামকরণ হয়েছে ব্যক্তি বিশেষের নামে। যা কোন ভাবেই কাম্য নয়। সরকারের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এবং দলীয় নেতা-কর্মীদের শোষণ ও নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করতেই তিনি এ নির্বাচনে প্রার্থী হতে আগ্রহী বলে জানান।
একান্ত আলাপচারিতায় উঠে আসে তার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের নানা কথা। তিনি জানান, ১৯৬৮ সালে ৮ম শ্রেণীতে অধ্যয়ণকালে ছাত্রলীগে যোগদান এবং ১৯৬৯ সালে ছাত্রলীগ স্কুল কমিটির যুগ্ম সম্পাদক হিসাবে ছাত্র গণ অভ্যূত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করি। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে ছাত্রলীগ কর্মী হিসাবে অগ্রণী ভূমিকা পালন করি। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে একজন কিশোর হয়েও ভারতে প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করি। ১৯৭৫ সালের জানুয়ারী মাসের প্রথমার্ধে স্থানীয় সাংসদ খন্দকার নুরুল ইসলামের সাথে বঙ্গবন্ধুর ৩২ নং বাস ভবনে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর আশীর্বাদ গ্রহণ করি। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট ঘাতকের নির্মম বুলেটে স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধু শহীদ হলে আওয়ামী পরিবারে নেমে আসে দুর্যোগের কালো অধ্যয়। ১৯৭৫ সালের ৩রা নভেম্বর পাল্টা অভ্যূত্থানে ফরিদপুর সরকারী রাজেন্দ্র কলেজে অধ্যয়ণকালে আওয়ামীলীগ ও ছাত্রলীগের বিশাল মিছিলে আওয়ামীলীগের নেতাদের সাথে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দেই ।
১৯৭৬ সালে ফরিদপুর ছাত্রলীগ পূণর্গঠনে ভূমিকা রাখি। এ সময় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সংস্পর্শে আসার সুযোগ হয়।
এ্যাড. ফরহাদ আহমেদ ১৯৭৭ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে পরবর্তীতে ছাত্রলীগ কবি জসিম উদ্দিন হল শাখার সভাপতির দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাজনৈতিক কর্মকান্ডে নেতৃত্ব দিয়ে তিনি ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যকরী সংসদের সদস্য এবং পরবর্তীতে গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৮২ সালের ২৪ শে মার্চ তৎকালীন সেনা প্রধান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সামরিক অভ্যূত্থানের দিনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের হলে হলে সেনা অভিযান পরিচালিত হলে অনেকের সাথে তিনি সেনা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার ও অমানবিক নির্যাতনের শিকার হন। একজন ছাত্র নেতা হিসাবে ডাকসু নির্বাচনে “কাদের-রবিউল” এবং “কাদের-নানক ” পরিষদের নির্বাচন পরিচালনার সাথে যুক্ত থেকে নিরলস পরিশ্রম করেন পরিচ্ছন্ন ও সদালাপী এই ছাত্রনেতা।
তিনি জানান, ১৯৮৫ সালে নিজ জেলা রাজবাড়ীতে রাজবাড়ী জেলা বার এসোসিয়েশন এর সদস্য হিসেবে আইন পেশা শুরু করেন এবং স্থানীয় রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন। প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিবেশে বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও গণবাহিনীর ত্রিমুখী দাপটে গ্রামীন জনপদের আওয়ামীলীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা সদা আতংকগ্রস্থ থাকতেন। পাংশা উপজেলায় সক্রিয় নেতা কর্মী ছিলেন না বলা যায়। পাংশার উপজেলা আওয়ামীলীগ ঐতিহাসিক দিবসগুলীতে মসজিদ মন্দিরে দোয়ার অনুষ্ঠান ছাড়া কোন দৃশ্যমান কর্মকান্ড, মিছিল-মিটিং ও শোভাযাত্রা পরিচালনা করতে পারত না, এমনকি ২৬ শে মার্চ এর কর্মসূচীতেও হামলার শিকার হতে হতো।
তিনি বলেন, সংগঠনের ক্রান্তিকালে আমি পাংশায় গিয়ে ছাত্রলীগকে সংগঠিত করি। ছাত্রলীগের সংগঠন বড় হয়। আওয়ামীলীগের সমর্থকরা বেড়িয়ে আসে। আমিই প্রথম ১৯৮৫ সালের ১৫ই আগষ্ট জাতীয় শোক দিবসে শোক সভা ও কাঙ্গালীভোজ এর আয়োজন করে সফলভাবে তা পালন করি। আমি ছাত্রলীগকে সাথে নিয়ে আওয়ামীলীগের একজন স্থানীয় নেতা হিসাবে তৃণমূল পর্যায়ে এরশাদ বিরোধী আন্দোলন এবং আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক কর্মকান্ড পরিচালনা করে আওয়ামীলীগকে একটি শক্তিশালী সংগঠনে পরিণত করতে সিংহভাগ ভূমিকা পালন করি।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের বয়োবৃদ্ধ নেতৃবৃন্দ সাবেক সংসদ সদস্য ও তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মরহুম এ্যাড. আঃ ওয়াজেদ চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম মসলেম উদ্দিন মৃধা, সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার নুরুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি মরহুম গওহার উদ্দিন মন্ডল, মরহুম খান আঃ হাই, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাসান আলী বিশ্বাস ও প্রফেসর আঃ ওহাব আমাকে সর্বদা অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। অতঃপর প্রবীন নেতৃবৃন্দ এর ইচ্ছায় আমি পাংশা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করি। আমি ঐ সময় পাংশার প্রতিটি গ্রামে জনপদে হাটে বন্দরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সভা সমাবেশ করে ঘরে ঘরে আওয়ামী লীগের দাওয়াত পৌঁছে দিয়েছি। দলীয় কর্মীদের মামলা মোকদ্দমা পরিচালনা করে তাদের আস্থা অর্জন করেছি । আওয়ামী লীগের একজন সক্রিয় নেতা হিসেবে ১৯৮৮ সালে এরশাদের স্বৈরচার বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে অন্যান্য নেতৃবৃন্দসহ গ্রেফতার ও নির্যাতনের শিকার হই।
১৯৯২ সালে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট এ আইন পেশায় যোগ দিয়ে সুনামের সাথে পেশাগত দায়িত্ব পালন করে আসছেন ফরহাদ আহমেদ। ওয়ান ইলেভেনের পর বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করলে ৮ই ফেব্রুয়ারী ২০০৯ তিনি ডেপুটি এটর্নী জেনারেল হিসাবে নিয়োগ লাভ করেন। রাষ্ট্রীয় আইন কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে রাষ্ট্র পক্ষের অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলা সাফল্যের সাথে তিনি পরিচালনা করেছেন। ঐতিহাসিক বিডিআর বিদ্রোহের ১১টি মামলা, পিলখানা হত্যা মামলা ও বেগম খালেদা জিয়ার এতিম তহবিল আত্মসাতের মামলায় আইনজীবী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। বেগম খালেদা জিয়ার এতিম তহবিল আত্মসাতের মামলায় দন্ডাদেশের বিরুদ্ধে মহামান্য উচ্চ আদালতের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের শীর্ষ আইন কর্মকর্তা হিসাবে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ঐ মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার শাস্তি ৫ বৎসরের স্থলে ১০ বৎসর নির্ধারণ হয়।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, রাজবাড়ী জেলা শাখার সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এ্যাড. ফরহাদ আহমেদ বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদ, সুপ্রীমকোর্ট শাখার সভাপতি এবং বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির (অধুনালুপ্ত) সাংগঠনিক সম্পাদক।
তিনি আরও জানান, বংশানুক্রমিকভাবেই তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত। তার পিতা আমৃত্যু আওয়ামী লীগের একজন সমর্থক ছিলেন। তার চাচাও আওয়ামী লীগের একজন আঞ্চলিক নেতা ছিলেন এবং তিনি মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। এ্যাড. ফরহাদ আহমেদের প্রয়াত স্ত্রী মাহফুজা খাতুন পাংশা পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা এবং পাংশা উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভানেত্রী ছিলেন।
রাজবাড়ীর নবগঠিত কালুখালী উপজেলার প্রবেশদ্বার রাজবাড়ী- কুষ্টিয়া মহাসড়কের সংযোগস্থলে বঙ্গবন্ধুর বিশালাকার ভাস্কর্য নির্মাণ ও রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য মূল্যবান জমি দান করে তিনি সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছেন।
এলাকার রাজনৈতিক কার্যক্রমে সম্পৃক্ততার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি আমার নির্বাচনী এলাকায় সাংগঠনিক সামাজিক কর্মকান্ডে নিয়মিত অংশ গ্রহন করি। এলাকার জনসাধারণ আমাকে গভীরভাবে ভালবাসে। আমি সুখে-দুঃখে তাদের পাশে থাকতে চাই। আমি একজন কৃষক পরিবারের সন্তান। আওয়ামী লীগের বাইরে আমার কোন আত্মীয় স্বজন নাই । বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নে সততার সাথে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অবিচল আস্থায় সংগঠনকে এগিয়ে নিতে চাই।
এ্যাড. ফরহাদ আহমেদ বলেন, বিগত ৩টি সংসদ নির্বাচনে আমি রাজবাড়ী-২ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলাম। ২০২১ সালের ১৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে আমি সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ছিলাম। বিগত সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চাওয়ায় রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিল্লুল হাকিম এমপি আমাকেও এবং আমার সহকর্মীদের সংগঠনের সকল স্তর থেকে পদ বঞ্চিত করেছেন।
আপামর কৃষক জনতার ভালবাসা আমার ব্যক্তিগত অর্জন। সততা, আন্তরিকতা ও দক্ষতার সাথে মানুষের সেবা করাই আমার লক্ষ্য। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণ আমার আদর্শ । আমাকে মনোনয়ন দিলে জীবন দিয়ে হলেও মানুষের ভালবাসার প্রতিদান দেব।

 

 

 

 

 

 

 

 

সোশাল মিডিয়া

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d bloggers like this: