Rajbari Protidin

২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , শনিবার
ব্রেকিং নিউজ

রাজবাড়ীতে ৭৮ লক্ষ টাকার টিআর প্রকল্পে হরিলুট

সোহেল রানা : রাজবাড়ী জেলার ৫টি উপজেলায় গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) কর্মসূচির আওতায় ৩য় কিস্তির বরাদ্দকৃত ৭৮ লক্ষ টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত অর্থ বছর অর্থাৎ ৩০ জুনের মধ্যে প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নের বাধ্যবাধকতা থাকলেও কিছু কিছু প্রকল্প খাতা কলমে বাস্তবায়ন দেখিয়ে পুরো অর্থ লোপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আবার কোন কোন পুরাতন প্রকল্পের হিসাব দিয়ে খাতা কলমে নতুন প্রকল্প বাস্তবায়ন দেখানো হয়েছে। এছাড়া কয়েকটি প্রকল্পের টাকা ফেরত চলে গেলেও রহস্যজনক কারণে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তারা ওইসব প্রকল্পের তথ্য প্রদানে গড়িমসি করছেন।
জানাগেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) কর্মসূচির আওতায় রাজবাড়ী জেলায় ৭৮ লক্ষ টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে বালিয়াকান্দি উপজেলায় নগদ অর্থ বরাদ্দ প্রদান করা হয় ১৫ লক্ষ ৭৪ হাজার ১০২ টাকা, গোয়ালন্দ উপজেলায় ১৪ লক্ষ ১৯ হাজার ১০২ টাকা, পাংশা উপজেলায় ১৬লক্ষ ৮২ হাজার ৯৬১ টাকা, রাজবাড়ী সদর উপজেলায় ১৮ লক্ষ ২১ হাজার ৬৪২ টাকা এবং কালুখালী উপজেলায় ১৩ লক্ষ ৪১ হাজার ৩৬৭ টাকা।
সংশ্লিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বালিয়াকান্দি উপজেলার অলংকারপুর দক্ষিণপাড়া জামে মসজিদ উন্নয়ন ৩লক্ষ টাকা, জামালপুর আকবরের বাড়ী হইতে জলিলের বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার ৩লক্ষ টাকা, সোনাইডাঙ্গা পাকা রাস্তা হইতে মামুনের বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার ৩লক্ষ টাকা, পারুলিয়া গ্রামের রবি মন্ডলের বাড়ী হইতে পুরানো ডিপ টিউবয়েল পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার ৩লক্ষ টাকা, সাঙ্গুরা রাস্তার ত্রাণের ব্রীজের পাশের্^ মাটি ভরাটের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্তকরণ ৩লক্ষ টাকা, পাংশা উপজেলার চর ঝিকড়ী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের মাঠে মাটি ভরাট ৩লক্ষ টাকা, বিল নিহেরী ব্রীজ থেকে ইবাদত বিশ্বাসের বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার ২লক্ষ টাকা, পাট্রা মোস্তফার বাড়ী হইতে শহর আলীর বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার ২লক্ষ টাকা, কোলানগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রাস্তা সংস্কার ৩লক্ষ টাকা, হাজরাপাড়া হেলালের বাড়ী হইতে খালেকের বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা উন্নয়ন ৩লক্ষ টাকা, পূর্ব বাগদুলী মাঠের পানি নিস্কাশনের জন্য পাইপ স্থাপন ৩লক্ষ টাকা, চর আফড়া খবির সরদারের বাড়ী সংলগ্ন সরদারপাড়া গোরস্থানের রাস্তা সংস্কার ৩লক্ষ টাকা, রামকোল পরিমলের বাড়ী হইতে কালী মন্দির পর্যন্ত রাস্তা পুণঃনির্মাণ ২লক্ষ টাকা,গাঁড়াল রেল হইতে মেইন রোড পর্যন্ত রাস্তা পুণঃ নির্মাণ ২লক্ষ টাকা,পাটিকাবাড়ী কবরস্থানের ঘর নির্মাণ ২লক্ষ টাকা, কৃষ্ণপুর পাকা রাস্তা হইতে কাইয়ুম কারিগরের বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার ৩লক্ষ টাকা, পাটিকাবাড়ী উজ্জলের দোকান হইতে নাসিম প্রামানিকের বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার ৩লক্ষ টাকা, কালুখালী উপজেলার মোহনপুর জনাব আলী মাস্টারের বাড়ীর সামনে থেকে বাবলু বিশ^াসের বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার ৩লক্ষ টাকা, মাঝবাড়ী কুষ্টিয়া পাড়া হরেন কুমারের বাড়ী হইতে এসব মাষ্টারের বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার ৩লক্ষ টাকা, কালিকাপুর নলকাতরা জামে মসজিদ উন্নয়ন ৩লক্ষ টাকা, মৃগী চৌমুখ গ্রামের সাদ আলীর বাড়ী হইতে আলম চৌধুরীর বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার ৩লক্ষ টাকা, রূপসা মধ্যপাড়া জামে মসজিদ উন্নয়ন ৩লক্ষ টাকা, বথুনদিয়া কবরস্থান উন্নয়ন লক্ষ টাকা, রাজবাড়ী সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর ক্লাবের ও মাঠ সংস্কার ১লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, স্বর্ণ মহিলা উন্নয়ন সংস্থার আসবাবপত্র ক্রয় ও সংস্কার ১লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, রথখোলা মোবারকের বাড়ী হতে সামাদের বাড়ী অভিমুখে মাটির রাস্তা সংস্কার ১লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, নিজপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিক হতে নিজপাড়া বটতলা পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার ১লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, মোঃ হোসেন মাস্টারের বাড়ী হইতে মোঃ ফরহাদ হোসেনের বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা মেরামত ও কালভার্টের নিচে মাটি ভরাট ২লক্ষ টাকা, রঞ্জিত দাসের বাড়ী হতে মোঃ সুনাম উদ্দিন খার বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা মেরামত ২লক্ষ টাকা, ভগীরথপুর নুরানীয়া হাফিজিয়া মডেল মাদ্রাসা সংস্কার ৩লক্ষ টাকা, ভগিরথপুর কালী মন্দির সংস্কার ২লক্ষ টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।
বালিয়াকান্দি উপজেলার বিভিন্ন প্রকল্প ঘুরে দেখাযায়, সব কাজ জুন মাসের আগেই করা হয়েছে। ওই আগের কাজকে নতুন প্রকল্প দেখানো হয়েছে।
বালিয়াকান্দির অলংকারপুর দক্ষিণপাড়া জামে মসজিদের সভাপতি হাসান আলী বলেন, ৩ লক্ষ টাকার প্রকল্পের ৫০ হাজার টাকা প্রথমে প্রদান করা হয়। দীর্ঘদিন টাকা প্রদানে গড়িমসি করলে বিষয়টি রাজবাড়ী-২ আসনের সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা মোঃ জিল্লুল হাকিমকে অবগত করার পর কিছু খরচ রেখে বাকী টাকা প্রদান করেছেন।
রাজবাড়ী সদর উপজেলার দাদশী ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর ক্লাবের ও মাঠ সংস্কার ১লক্ষ ৫০ হাজার টাকা এ প্রকল্পের সভাপতি রাজবাড়ী পৌরসভার ভবানীপুরের মোঃ লিটন শেখ, বানিবহের স্বর্ণ মহিলা উন্নয়ন সংস্থার আসবাবপত্র ক্রয় ও সংস্কার ১লক্ষ ৫০ হাজার টাকার সভাপতি মুলঘর ইউনিয়নের বিলনয়াবাদ গ্রামের রোজিনা চৌধুরী, বানিবহ ইউনিয়নের রথখোলা মোবারকের বাড়ী হতে সামাদের বাড়ী অভিমুখে মাটির রাস্তা সংস্কার ১লক্ষ ৫০ হাজার টাকার সভাপতি রাজবাড়ী পৌরসভার ভবানীপুরের মোঃ লিটন শেখ, বানিবহের নিজপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিক হতে নিজপাড়া বটতলা পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার ১লক্ষ ৫০ হাজার টাকার সভাপতি মুলঘর ইউনিয়নের বিলনয়াবাদ গ্রামের রোজিনা চৌধুরী, মুলঘরের শেখ পলাশের বাড়ী হতে মোঃ বড় মনির বাড়ী পর্যন্ত সংস্কার ২লক্ষ টাকার সভাপতি তাহমিনা খানম, ভগিরথপুর আছিরদ্দিন জামে মসজিদের সংস্কার ২লক্ষ টাকার সভাপতি আঃ ছালাম শেখ, মুলঘর মোঃ হোসেন মাস্টারের বাড়ী হইতে মোঃ ফরহাদ হোসেনের বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা মেরামত ও কালভার্টের নিচে মাটি ভরাট ২লক্ষ টাকা ও মুলঘর রঞ্জিত দাসের বাড়ী হতে মোঃ সুনাম উদ্দিন খার বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা মেরামত ২লক্ষ টাকার সভাপতি রশোড়া গ্রামের তাহমিনা খানম, ভগীরথপুর নুরানীয়া হাফিজিয়া মডেল মাদ্রাসা সংস্কার ৩লক্ষ টাকার সভাপতি মোঃ নুরুল ইসলাম, মুলঘরের ভগিরথপুর কালী মন্দির সংস্কার ২লক্ষ টাকার প্রকল্পের সভাপতি ভগিরথপুর রশোড়ার বিনয় বিশ্বাস। এসকল প্রকল্প ঘুরে দেখাগেছে, জুন মাসের পরে কোন কাজ হয়নি। আর এক ইউনিয়নের লোক অন্য ইউনিয়নের প্রকল্প সভাপতি হয়েছেন।
কালুখালী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের প্রকৌশলী শরিফুল ইসলাম বলেন, আসলে গত ২৫ জুন বরাদ্দ পাওয়া যায়। এ বরাদ্দের অনুকূলে কালিকাপুর নলকাতরা জামে মসজিদ উন্নয়ন ৩লক্ষ টাকা, মৃগী চৌমুখ গ্রামের সাদ আলীর বাড়ী হইতে আলম চৌধুরীর বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার ৩লক্ষ টাকা উত্তোলন করা হয়। এরমধ্যে মসজিদের টাকা দেওয়া হয়েছে। বাঁকী সড়ক নির্মাণের ৩লক্ষ টাকা উত্তোলন করে রাখা হয়েছে। তবে কোন কাজ হয়নি। অন্যান্য প্রকল্পের টাকা সময়ের মধ্যে উত্তোলন করতে না পারায় ফেরত গেছে।
রাজবাড়ী সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এস,এম মনোয়ার মাহমুদের সাথে কথা বলতে ৫দিন ধরে ঘুরলেও তাকে অফিসে পাওয়া যায়নি। তার অফিস রুমটির তালা খোলা থাকলেও তিনি অফিসে নেই।
ওই কার্যালয়ের প্রকৌশলী বিজয় কুমার প্রামানিক বলেন, স্যার বাইরে আছেন। ৫দিন ধরে অফিসে এসে ঘুরে না পাওয়ার বিষয়ে তিনি কোন সদোত্তর দিতে পারেননি। তবে সদর উপজেলার প্রকল্প গুলো কাজ হয়েছে কিনা তিনি বলেন, আসলে শেষ সময়ে বরাদ্দ পাওয়ায় দ্রুত টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। কাজ হওয়ার কথা।
পাংশা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আসলাম হোসেন বলেন, আমি যোগদানের আগে এ প্রকল্প বরাদ্দ আসে। সব প্রকল্পের টাকা উঠাতে পারেনি। কিছু টাকা ফেরত গেছে। তবে তার পরিমাণ জানাতে পারেননি। এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। এক সপ্তাহ পর দিবো। তবে পরবর্তীতে ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কোন তথ্য দেননি।
বালিয়াকান্দি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নাসরিন সুলতানা বলেন, বালিয়াকান্দির প্রকল্প গুলো ভালো কাজ হয়েছে। তবে মসজিদের টাকা প্রথমে ৫০ হাজার প্রদান করলেও পরবর্তীতে সম্পন্ন টাকা প্রদান করেছেন। তবে প্রকল্প সভাপতিদের নামের তালিকা প্রদানে গড়িমসি করেন।

সোশাল মিডিয়া

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d bloggers like this: