স্টাফ রিপোর্টার : “শুভ কাজে সবার পাশে” এ শ্লোগানকে সামনে রেখে ‘বসুন্ধরা শুভসংঘ’ রাজবাড়ী জেলা শাখার উদ্যোগে ‘স্কুল-কলেজের ছাত্রী ও তাদের মায়েদের সচেতন করতে স্বাস্থ্য শিক্ষা বিষয়ক সেমিনার”-এর আয়োজন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে জেলা শহরের শেরে বাংলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রধান অতিথি হিসেবে এ সেমিনারের উদ্বোধন ঘোষনা করেন, সাবেক শিক্ষাপ্রতিমন্ত্রী ও রাজবাড়ী-১ আসনের এমপি কাজী কেরামত আলী।
ওই সেমিনারের প্রধান আলোচক ছিলেন, রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের গাইনী কনসালটেন্ট ডাঃ শাহনিমা নার্গিস।
‘বসুন্ধরা শুভসংঘ’ রাজবাড়ী জেলা শাখার সভাপতি ও রাজবাড়ী সরকারী কলেজের সহযোগি অধ্যাপক আশরাফ হোসেন খান। জেলা শাখার সহ-সাধারণ সম্পাদক ও শেরে বাংলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হাফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন, সমাজ সেবক হেদায়েত আলী সোহরাব, ডাঃ রহিম মোল্লা, ‘বসুন্ধরা শুভসংঘ’ রাজবাড়ী জেলা শাখার সহ-সভাপতি ও শেরে বাংলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম, সহ-সভাপতি ও সদর উপজেলার বরাট-ভাকলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শম্পা প্রামাণিক, সহ-সভাপতি ও সদর উপজেলার রাজাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অমিতা রানী সাহা, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মৌসুমী সাথী প্রমুখ।
প্রধান আলোচক ছিলেন, রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের গাইনী কনসালটেন্ট ডাঃ শাহনিমা নার্গিস বলেন, ‘বসুন্ধরা শুভসংঘ’ রাজবাড়ী জেলা শাখা সময় উপযোগি ‘স্কুল-কলেজের ছাত্রী ও তাদের মায়েদের সচেতন করতে স্বাস্থ্য শিক্ষা বিষয়ক সেমিনার”-এর আয়োজন করেছেন। এ জন্য ‘বসুন্ধরা শুভসংঘ’ রাজবাড়ী জেলা শাখকে ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি এ কর্মকান্ড অব্যাহত রাখবে বলেও তিনি অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, কিশোরীদের বয়ঃসন্ধিকালে শরীর ও মনে নানা ধরনের পরিবর্তন ঘটে। এ সময় চিন্তা-চেতনার সঙ্গে সঙ্গে শারীরিকভাবে মানসিকভাবে বেড়ে উঠতে থাকে তারা। এটি মূলত কৈশোর ও যৌবনের একটা মধ্যবর্তী পর্যায়ে হয়ে থাকে। ১০-১৩ বছরের মধ্যে যে কোনো সময় মেয়েদের বয়ঃসন্ধিকাল শুরু হয়। এ সময়ে নিজের জীবন পছন্দ-অপছন্দ, দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে ওঠে। এ সময় কিশোরীরা স্বাধীনভাবে কিছু ভাবতে শুরু করে সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করে। হরমোনের প্রভাবে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন দেখা যায় শরীরে। কখনো রাগ করে কখনো আবার খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেয়, কখনো আবার খুব বেশি খায়, ঠান্ডা মেজাজে থাকে। ওই সময়টাতে বাবা-মায়ের বা অভিভাবককে বিশেষ ভূমিকা পালন করতে হয়। কারণ তাদের আচার-আচরণ অনেক ধরনের পরিবর্তন দেখা যায়। তাদের বিশ্বাসের জায়গাটা এ সময় সবার আগে অর্জন করতে হবে। তার পর বুঝিয়ে ধীরে ধীরে বলতে হবে। তাদের ওপর হাত তোলা কিংবা খারাপ আচরণ করা যাবে না। বয়ঃসন্ধিকালে মেয়েদের প্রজনন ক্ষমতা বিকাশ হয়। তাই অবশ্যই কীভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হয়, এটি যেমন স্কুলের দায়িত্ব, সেই রকম বাবা-মায়েরও দায়িত্ব। বয়ঃসন্ধিকালীন সবার আগে কিশোরীদের শেখাতে হবে কীভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হয়। কারণ হাইজিন মেইনটেইন না করলে মারাত্মক সংক্রমণ দেখা দেয় শরীরে। এছাড়া মাসিক চক্র ব্যবস্থাপনা সময় খুবই জরুরি বিষয়। কারণ মাসিকের সময় ন্যাপকিন প্যাড বা কাপড় ব্যবহার করে অবশ্যই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। স্যানিটারি ন্যাপকিন ওয়ান টাইম ব্যবহার করতে হয়। প্রতি ৬ ঘণ্টা পর পর পরিবর্তন করতে হয়। কাপড় ব্যবহার করলে অবশ্য ভালোমতো পরিষ্কার করে শুকনা কাপড় ব্যবহার করতে হবে। যদি ঠিকমতো এই ব্যবস্থাপনাগুলো না করা হয়, তা হলে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ হতে পারে। এ সংক্রমণের ফলে মেয়েদের জরায়ু, ফেলোপিয়ান টিউব ব্লকসহ নানাবিধ জটিলতা তৈরি করে প্রজনন ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এই সময়ে বেশি বেশি পুষ্টিকর খাবার, সমৃদ্ধ খাবার ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খেতে হবে। কৈশোর বয়সটা শরীর গঠনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। এ সময সুষম খাবার ও সঙ্গে এক্সারসাইজ এবং নিয়মমতো ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমানো দরকার।
প্রধান অতিথি’র বক্তৃতায় সাবেক শিক্ষাপ্রতিমন্ত্রী ও রাজবাড়ী-১ আসনের এমপি কাজী কেরামত আলী বলেন, ‘বসুন্ধরা শুভসংঘ’ রাজবাড়ী জেলা শাখা বিভিন্ন সময় ব্যতিক্রমী নানা ধরণের আয়োজন করে থাকে। তার মধ্যে এবারের আয়োজনটি ছাত্রীদের জন্য অধিক গুরুত্বপূর্ণ। এই সেমিনারে ছাত্রীদের পাশাপাশি তারা মাদেরও উপস্থিত করেছে যা অত্যান্ত জরুরী। বয়ঃসন্ধিকালে কিশোরীদের মধ্যে জড়তা থাকে। এই সেমিনারের মাধ্যমে মা ও মেয়েদের অত্যান্ত নিবীর ভাবে স্বাস্থ্য তথ্য উপস্থাপন করা হলো। এ আয়োজনের জন্য ‘বসুন্ধরা শুভসংঘ’ রাজবাড়ী জেলা শাখকে তিনি ধন্যবাদ জানান।