স্টাফ রিপোর্টার : রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে টনসিল অপারেশনে ৮ বছর বয়সী এক শিশু মৃত্যুর ঘটনায় ২ চিকিৎসক সহ ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) নির্দেশ দিয়েছেন। রবিবার রাজবাড়ীর ১ নং আমলী আদালতে এ মামলাটি দায়ের করেন গোয়ালন্দের ছোট ভাকলা ইউনিয়নের চর বারকীপাড়া এলাকার মুন্নু বিশ^াসের স্ত্রী কাকলী খাতুন। মামলার আসামীরা হলেন রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের নাক, কান ও গলা বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডাঃ তাপস চন্দ্র মন্ডল, এনেসথেশিয়া বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডাঃ ইকরামুল করিম উল্লাস ও রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল সংলগ্ন ডিজিটাল ক্লিনিকের ম্যানেজার চরনারায়নপুর এলাকার মোঃ আতাউর মন্ডল।
মামলা সূত্রে প্রকাশ, গত ২৪ আগস্ট বিকাল সাড়ে ৫ টার দিকে কাকলী খাতুন তার ৮ বছর বয়সী শিশু পুত্রর টনসিলের সমস্যা নিয়ে রাজবাড়ী মেডিকেল সেন্টারে নাক,কান ও গলা রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ তাপস মন্ডলের কাছে যান। তিনি রোগীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর অপারেশন করার পরামর্শ দেন এবং বেশ কিছু পরক্ষা করতে বলেন। এসময় পাশর্^বর্তী ডিজিটাল ক্লিনিকের ম্যানেজার আতাউর মন্ডল কাকলী খাতুনকে তার ক্লিনিকে নিয়ে যান এবং পরীক্ষা-নীরিক্ষার পাশাপাশি কম খরচে ওই ডাক্তারকে দিয়ে অপারেশন করিয়ে দিতে আশ^স্ত করেন। এজন্য আতাউর মন্ডল ওই শিশুর মাতার কাছ থেকে অপারেশনের খরচ বাবদ সাড়ে ৬ হাজার টাকাও গ্রহণ করেন।
অভিযোগ রয়েছে, আতাউরের কথা মত কাকলী খাতুন তার ছেলেকে নিয়ে ২৮ আগস্ট রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে আসেন এবং জরুরী বিভাগ থেকে টিকেট নিয়ে বহির্বিভাগে ডাঃ তাপস মন্ডলকে দেখান। ডাঃ তাপস রোগীর অপারেশনের জন্য হাসপাতালে ভর্তি হতে বলেন। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রোগী পরদিন ২৯ আগস্ট হাসপাতালে ভর্তি হয়। ওইদিন বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে শিশু মোস্তাকিমের টনসিল আপারেশন করা হয়। অপারেশনের আগে ডাঃ রোগীর মাতাকে বলেন, ৩০-৩৫ মিনিটের মধ্যেই অপারেশন শেষ হবে এবং তার ছেলেকে বেডে দেওয়া হবে। এরপর ৩/৪ ঘন্টা পার হয়ে গেলেও রোগীর জ্ঞান না ফেরায় ডাক্তাররা অপারেশন থিয়েটারে কালক্ষেপন করতে থাকে। এক পর্যায়ে রাত ৯ টার দিকে রোগীকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করা হয়। পরে তাকে ফরিদপুর রেফার্ড করা হয়। তৎক্ষণাৎ রোগীর আত্নীয় স্বজন রোগীকে নিয়ে প্রথমে ফরিদপুর ডায়াবেটিক হাসপাতালে গেলে তারা রোগী গ্রহণ না করে ফেরত পাঠায়। এরপর ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে নেওয়া হলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক রোগীর পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। এরপর এ্যাম্বুলেন্সযোগে ফরিদপুর থেকে ঢাকা নেওয়ার পথে রাজবাড়ীর বসন্তপুর এলাকায় পৌছলে রোগী মোস্তাকিম মারা যায়।
এ বিষয়ে মৃত রোগী ৮ বছরের শিশু মোস্তাকিমের মাতা কাকলী খাতুন বাদী হয়ে রবিবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাজবাড়ীর ১ নং আমলী আদালতে দন্ডবিধির ৩০৪/৩০৪ (ক)/১৬৮/১৯৮/৩৪ ধারায় মামলা দায়ের করে। মামলার প্রেক্ষিতে আদালতের বিজ্ঞ বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ সুমন হোসেন মামলাটি তদন্তের রাজবাড়ী সিআইডিকে নির্দেশ দিয়েছেন।
আদালতে বাদী পক্ষে আইনজীবী হিসেবে মামলা পরিচালনা করেন রাজবাড়ী জেলা বার এসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক ও সাবেক এপিপি এ্যাড. খান মোঃ জহুরুল হক, এ্যাড. বিপ্লব কুমার রায়, এ্যাড. সুজয় কুন্ডু, এ্যাড. মাহবুবুর রহমান, এ্যাড. সম্রাট খান প্রমুখ।
এবিষয়ে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ এস এম এ হান্নান বলেছেন, টনসিলের সমস্যা নিয়ে ভর্তি হওয়া শিশুটিকে ফরিদপুরে রেফার্ড করা হয়েছিল। তবে শিশুটির মৃত্যুর খবর আমার জানা নেই। অপারেশনকালীন শিশুর ব্লাড সুগারের মাত্রা ৫০ এমএল ছিল বলে তিনি স্বীকার করেন।