রুবেলুর রহমান : রাজবাড়ী সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীনে রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়ক প্রশস্ত ও উন্নতিকরণ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার ১৬ মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো শুরু হয়েছে সংস্কার কাজ। সড়কের ক্ষতিগ্রস্থ স্থান জোড়াতালি দিয়ে সংস্কার করা হচ্ছে।
এদিকে জনমনে কাজের মান নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। এ সড়কের কারণে যানবাহনের চালক, পথচারী ও সড়কের পাশে থাকা ব্যবসায়ীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়ক একটি জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক। এ সড়কের শ্রীপুর থেকে বড়পুল পর্যন্ত দুইপাশে রয়েছে একাধিক সরকারী-বেসরকারী গুরুত্বপূর্ণ অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাজার এবং হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনেষ্টিক সেন্টার। ফলে প্রতিনিয়তই এ সড়কট দিয়ে চলাচল করে ভিআইপিসহ সকল শ্রেণী পেশার মানুষ। এছাড়া সড়কটি দিয়ে ভারী যানবাহনসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচল করে। কিন্তু কাজ শেষের পরেই সড়কটি ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় প্রতিনিয়তই দূর্ভোগের শিকার হচ্ছেন জনগণ।
জানাগেছে, ২০১৮ সালের শুরুতে ১৮ মাস মেয়াদী রাজবাড়ীর আঞ্চলিক মহাসড়ক প্রশস্ত ও উন্নতিকরণ প্রকল্পের আওতায় দ্বিতীয় প্যাকেজে শ্রীপুর জেলা পরিষদ কার্যালয়ের সামনে থেকে চরবাগমারা আহমদ আলী মৃধা কলেজ পর্যন্ত ৪.১ কিলোমিটার ফোরলেন সড়কের কাজ শুরু করে ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। প্রায় ৬০ কোটি টাকা চুক্তিমূল্যে এ প্রকল্পের কাজ নির্দ্দিষ্ট সময়ে শেষ করতে না পারায় কয়েক দফায় কাজের মেয়াদ বাড়িয়ে করা হয় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। ওই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবার আগেই শহরের বড়পুল থেকে সড়ক বিভাগ পর্যন্ত সড়কের অনেকস্থানের মাঝ বরাবর দেবে সরু লাইন তৈরি হয়। ফলে জনগুরুত্বপূর্ণ এ সড়কে ব্যাহত হয় যানবাহন চলাচল। যার কারণে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবার ৩ মাসের মধ্যে অর্থাৎ ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে দেবে যাওয়াস্থানে প্রথমবারের মতো কাপের্টিংয়ের মাধ্যমে সংস্কার করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। প্রথম বার সংস্কারের এক বছর পর আবার একই স্থানে রাস্তা খুড়ে দ্বিতীয়বারের মতো সংস্কার কাজ শুরু হয়।
মোটর সাইকেল চালক রাশেদুল ইসলাম নিরব, শামীম, রাশেদ খান সহ কয়েকজন বলেন, হাইওয়ে সড়ক নির্মাণের পর প্রায় ১৫ থেকে ১০ বছর টেকসই হয়। কিন্তু রাজবাড়ীর বড়পুল থেকে সড়ক বিভাগ পর্যন্ত সড়ক ৬ মাস বা ১বছর আগে একবার সংস্কার করা হয়েছে এবং এখন আবার করছে। কিন্তু এ কাজটি বেশি দিন আগে শেষ হয়নি। সড়কের মধ্য দিয়ে খাল হয়ে নদীর ঢেউয়ের মতো সৃষ্টি হয়েছে। যার কারণে বাইক নিয়ে যেতে গেলে দোল খেলে। আবার বৃষ্টি হলেই সেখানে পানি জমে উচু নিচু বোঝা যায় না। যখন দ্রুত গতির কোন যানবাহন যায়, তখন ওই পানি ছিটে পাশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, পথচারী বা তাদের গায়ে লাগে। এ ভাবে কাজ করে দেশের বা তাদের নিজের টাকা অপচয় করা হচ্ছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও অদক্ষ মানুষের কারণে এ অবস্থা হয়েছে। এখন এর ভুক্তভোগী হচ্ছেন সবাই। মুলত কাজের মান খারাপ ও নি¤œমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় এখন রাস্তা বার বার সংস্কার করতে হচ্ছে।
ইজিবাইক চালক সোহেল ও শাহ আলম মিয়া বলেন, সড়কে এক সাইড ঢাল, লোড গাড়ি চালাতে গেলে সমস্যা হয়। এরপর আবার শহরের বড়পুল থেকে প্রায় শ্রীপর পর্যন্ত সড়কে গাড়ি চলাচলের চাকার লাইন তৈরি হয়েছে। যার কারণে অনেক সময় গাড়ি এদিক ওদিক চলে যায়, তখন পেছনে বড় থাকলে ভয় লাগে। এতে যেমন তাদের গাড়ি চালাতে সমস্যা হয়, তেমিন বড় গাড়িরও সমস্যা হয়। এ সড়কে পুরাতন চালক ছাড়া নতুন চালক হলেই দূর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে। নতুন করা সড়ক এত দ্রুত নষ্ট হবে কে? মূলত কাজ ভাল না করার কারণে সড়কটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
সড়ক সংলগ্ন ব্যবসায়ী মোকলেছুর রহমান ও নাহিদ চৌধুরী বলেন, এ সড়কটি জেলা শহরের প্রধান সড়ক এবং এর পাশেই তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। নি¤œমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করায় সড়কটির বিভিন্নস্থানে দেবে গিয়েছে। বৃষ্টির সময় এই দেবে যাওয়া স্থানের নোংরা পানি দ্রুত গতির যানবাহন গেলে ছিটে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চলে আসে। এ অবস্থায় সড়কটি ভাল ভাবে করা প্রয়োজন। মাঝে মধ্যেই ট্রাক নিয়ে এসে সড়কের ক্ষতিগ্রস্থ স্থান খুড়ে মসলা দিয়ে ডলে দিয়ে যায়। পরে আবার যা তাই হয়ে যায়। গতবছর সড়কের কাজ শেষ হবার পর এখন পর্যন্ত দুইবার সংস্কার করা হচ্ছে। তাছাড়া মাঝে মধ্যেই করেছে। কিন্তু কোটি কোটি টাকা খরচ করে সড়কটি তৈরি করে তাহলে লাভ কি? যদি ৫-১০ বছর টেকসই না হয়। এখন সড়কের পাশের তাদের মত ব্যবসায়ীসহ সকলের ভোগান্তি হচ্ছে।
রাজবাড়ী সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী তুষার আহমেদ বলছেন, কাজটি গত বছর শেষ হলেও অর্জিনালি শেষ হয়েছে ২০১৯ সালের জুন মাসে। সড়কের যেখানে যেখানে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, সেখানে বাসস্ট্যান্ডের মতো ব্যবহার করায় এমন হয়েছে। কিন্তু সেখানে বাসস্ট্যান্ড ধরা ছিলো না। চুক্তি অনুযায়ী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মেরামত করা হচ্ছে। এরআগেও একবার মেরামত করা হয়েছে। কোন কারণে নিদ্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেরামতে অস্বীকৃতি জানালে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়।