Rajbari Protidin

২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , শনিবার
ব্রেকিং নিউজ

বালিয়াকান্দিতে পানির উপর নির্মিত হয়েছে সাড়ে তিনশত প্রতিমা

বালিয়াকান্দি প্রতিনিধি : রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের আলোকদিয়া গ্রামে মহামারী করোনার প্রভাব কাটিয়ে তিন বছর পর আবার ব্যতিক্রমী দুর্গা ম-প নির্মাণ করা হয়েছে।
পুকুরের পানির উপর ২২ হাজার বাঁশ কাঠ, পাট ও সোলা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে দুই তলা উচ্চতার এই ম-প। দেবী দুর্গার পাশাপাশি এই ম-পে স্থান পাবে সাড়ে তিনশ’টি প্রতিমা। মূল পূজার পাশাপাশি দক্ষযজ্ঞের কাহিনী, কুঞ্জবনে শ্রীকৃষ্ণের লীলা ও সরকারের উন্নয়নের চিত্র কৃত্রিম মেট্রোরেল সহ বেশ কয়েকটি কাহিনী তুলে ধরা হবে। গত তিন মাস ধরে ৫০ জন নির্মাণ শ্রমিক ম-পগুলো তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে নিয়ে আসছেন। প্রতিমাগুলোতে চলছে রংয়ের কাজ। আয়োজকরা মনে করছেন ব্যতিক্রমী এই আয়োজন দেখতে দেশে ও বিদেশ থেকে আসবেন কয়েক লাখ মানুষ। ম-পের সামনে আসলেই চোখে জুড়বে বিশাল আকৃতির শিবের মূর্তি। একবার ম-পের প্রবেশ পথ অতিক্রম করলেই ১৪শ’ ফুট পায়ে হেঁটে শেষ করতে হবে প্রতিমা প্রদর্শন। তবে ম-পের ভেতর কোথাও বেশি সময় দাড়িয়ে থাকার উপায় থাকবে না। শেষে পৌঁছে যাওয়া যাবে মূল দুর্গা ম-পে। দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করতে ম-পের ভেতর তুলে ধরা হয়েছে দক্ষযজ্ঞ থেকে শুরু করে সতীর পুনর্জন্ম ও ৫১টি শক্তিপীঠের কাহিনী। পুকুরের ওপর তৈরি করা হয়েছে ওভারব্রিজ, ব্রিজের দুই পাশে ফোয়ারা। রয়েছে কৃত্রিম মেট্রোরেল, ভেতরে যাত্রী হিসেবে থাকবে ২০ জন মনীষী। এরইমধ্যে আয়োজন দেখতে আসতে শুরু করেছেন জেলার বিভিন্ন স্থানের দর্শনার্থীরা। তাদের দাবি, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির আলোকদিয়াই এই আয়োজন ব্যতিক্রমী। পূজার আগে কিভাবে মন্দিরগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে সেটি দেখতে এখানে আসা। বাঁশ আর কাঠ দিয়ে মন্দিরগুলো সজ্জিতকরণ হলে অপরূপ সৌন্দর্য ফুটে উঠবে। সনাতন ধর্ম সম্পর্কে শেখা যায় আলোকদিয়ার এই পূজা থেকে। আয়োজন বাংলাদেশর জন্যই জন্য গর্বের। পাশের গ্রামের ইউসুফ মিয়া দীর্ঘ ১০ বছরের অধিক সময় ধরে প্রতিবছর এই ম-প নির্মাণ করেন। তিনি বলেন, বিগত বছরের থেকে এ বছর বড় পরিসরে ম-প নির্মাণ করা হয়েছে। আমরা ৫০জন শ্রমিক তিন মাস ধরে কাজ করে শেষ পর্যায়ে নিয়ে আসছি। কাঠামো তৈরি করা হয়েছে। কাঠের পাটাতন দেওয়া শেষ হয়েছে। এখন কাপড় আর সোলা দিয়ে মন্দিরগুলোর সজ্জিতকরণ করা হবে। ষষ্ঠীর আগের দিন সকল আয়োজন শেষ করা হবে। এবছর মন্দির তৈরি করতে প্রায় ২২ হাজার বাঁশ ও অনেক কাঠের তক্তা ব্যবহার করা হয়েছে। এই আয়োজন দেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় আয়োজন।
মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক গোবিন্দ বিশ্বাস বলেন, আমরা প্রতি বছর এখানে ব্যতিক্রমী আয়োজন করি। করোনার পর তিন বছর বড় পরিসরে এই আয়োজন করতে পারিনি। এবছর আবার শুরু করেছি।
ম-পের ভেতর ৮টি স্থানে সনাতন ধর্মের কাহিনী ফুটিয়ে তোলা হবে। বাঁশ, কাঁঠ, কাপড় ও সোলা দিয়ে ম-পগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। মন্দিরের ভেতরে সরকারের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। যেখানে মেট্রোরেলের ভেতরে মাটির তৈরি মনীষীদের ভাস্কর্য রাখা হয়েছে। তাদের জীবনাদর্শ সম্পর্কে মানুষ যেন জানতে পারেন। সেই তথ্য রাখা হয়েছে। লক্ষ্মী পূজা পর্যন্ত এই আয়োজন থাকবে বলে জানান তিনি।
রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার জি. এম. আবুল কালাম আজাদ বলেন, রাজবাড়ীতে এ বছর ৪৪৬ টি ম-পে দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিটি ম-পে আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। তবে বালিয়াকান্দি উপজেলার জামলপুর ইউনিয়নের আলোকদিয়া গ্রামে বড় পরিসরে দুর্গা পূজা হবে। সেখানে আমাদের তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে।
রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খান বলেন, আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসবে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির আলোকদিয়া গ্রামের মন্দির কমিটি ব্যতিক্রমী আয়োজন করেছেন। তাদের আয়োজন সম্পর্কে আমি অবগত রয়েছি। সনাতন ধর্মের কয়েকটি দিক সেখানে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। যেখান থেকে মানুষ ধর্ম সম্পর্কে জানতে পারবেন। এই আয়োজন আমাদের সবার জন্য গর্বের।

সোশাল মিডিয়া

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d bloggers like this: